মুহাম্মদ মাসুদ রানা, হালুয়াঘাটঃ ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা শাহ মাজহারুল হান্নান আর নেই। গত ১৪ফেব্রুয়ারী রবিবার সন্ধ্যা ৮ টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
আজ বেলা তিনটায় গাজিরভিটার শিমুলকুচি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে রাষ্ট্রীয় গার্ড অফ অনার ও জানাজা নামাজের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের এই কিংবদন্তিকে চির বিদায় জানানো হয়।
শাহ মাজহারুল হান্নান ১৯৩৫ সালের অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখে কৈচাপুর ইউনিয়নের ভেকিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম শাহ আব্দুল মতিন, মাতা উম্মে কুলসুম। তিনি বর্তমানে গাজিরভিটা ইউনিয়নের শিমুলকুচি গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তালিকাভূক্ত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। তিনি তখন ময়মনসিংহ শহরে থাকতেন তখন ময়মনসিংহে ব্যাপক ধরপাক শুরু হলে তিনি পালিয়ে হালুয়াঘাট চলে আসেন। হালুয়াঘাট এসেও পুলিশের নজর এড়িয়ে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে থাকেন। ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফন্টের বিজয় লাভের পর পুলিশের নজরদারী থেকে রেহাই পান। ১৯৫৫ সালে শাহ মাজহারুল হান্নানের পিতা মারা যাওয়ায় তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। সেবছরই তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং হালুয়াঘাট থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে হালুয়াঘাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে এই পদে অধিষ্ঠিত থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতিত্বেরও দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি একজন সু-লেখক ছিলেন। ২০০৪ সালে হালুয়াঘাটের মুক্তিযুদ্ধের উপর সংক্ষিপ্ত আকারে “বিজয় এলো” নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখায় ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০১০ সালে তিনি “ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার ফাউন্ডেশন পদক” -এ ভূষিত হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা শাহ মাজহারুল হান্নান মৃত্যুকালে স্ত্রীসহ ৫ ছেলে ও ৫ মেয়ে, অসংখ্য আত্মীস্বজন এবং বহু গুণগ্রাহী, শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুতে হালুয়াঘাট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শোক, শ্রদ্ধা ও গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।